Date:

Share:

যে হাওড়ে রয়েছে ১০৯ টি বিল!

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য লেখা


দিনের বেলা গোধুলীর সৌন্দর্য থেকে শুরু করে, রাতের বেলা চাঁদের আলোয় হাওড়ের এক অতিপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব দেখার সুযোগ আছে এটায়।  এ যেন পানির উপর ভাসমান চলন্ত এক বাড়ি। এর কারণেই পর্যটকদের আনাগোনা আগের তুলনায় আরও বেড়েছে।


দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জ। ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৭ সালে। ইতিহাস ঐতিহ্যের পাশাপাশি এই জেলায় রয়েছে অনেক নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা দর্শনীর স্থান। সুনামগঞ্জ কে বলা হয় ‘’ হাওড়কন্যা’’। এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের জীবন জীবিকার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় হাওড়, খাল, বিল। এর মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত একটি হাওড় হলো টাঙ্গুয়ার হাওড়।

মূলত এই অঞ্চলের প্রধান হাওড় টিই হলো এই টাঙ্গুয়ার হাওড়। সারাবছর এই হাওড়ের অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে, দেশের দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা । সুন্দরবনের পর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় “ রামসার সাইট”।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর ও ধরমপাশা উপজলা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওড়ের বিস্তার । এই অঞ্চলের অধিকাংশ বিল ও খাল এই হাওড় থেকেই উৎপত্তি। বর্ষা মৌসুমে সব খাল বিলের পানি এক হয়ে এক বিশাল জলরাশির সৃষ্টি হয়। তখন হাওড় রুপ নেয় সমুদ্রে। ওই সময়ে হাওড়ের সৌন্দর্য আরও হাজার গুণে বেড়ে যায়, পর্যটক রাও ঐ সময়ে ভিড় জমায় হাওড়ে।

হাওড়ের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে ৩৮ টি ঝর্ণা এসে মিশেছে হাওড়ে। বিকেলের রোদে মেঘের ছায়ায় নীল হয়ে ওঠে হাওড়ের জল। তখন দেখলে মনে হয় শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোন এক অপরূপ চিত্র। এছাড়াও এই হাওড়ে রয়েছে কিছু বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ যেমন হিজল, করচগাছ, নলখাগড়া, সিঙরা, চাইল্যা,বইল্যা, বনতুলসি ইত্যাদি।  তাহিরপুর এবং ধরমপাশা উপজেলা মিলিয়ে হাওড় টির মোট ২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আয়তন জুড়ে বিস্তার করছে। ১০৯ টি বিল রয়েছে এই একটি হাওড়েই। ভ্রমনপিপাসু দের কাছে এই হাওড় টি অন্যতম একটি আকর্ষণীয় স্থান। হাওড়ের পাশেই রয়েছে পর্যেক্ষণ টাওয়ার , যার দ্বারা খুব সহজেই পুরো হাওড় কে পাখির চোখে দেখা যায়। ছোট –বড় বেশ কিছু নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়, যা দিয়ে পুরো হাওড় ঘুরে দেখা যায়। স্পিড বোট ও আছে, যারা অল্পসময়ে পুরো হাওড় দেখতে চান। পরিবার পরিজন দের সাথে গেলে নৌকা ভাড়া করে নিতে পারেন।

সারাদিন হাওড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে রাখা ভালো। বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এমন কিছু নৌকা চালু হয়েছে, যার মধ্যে একটি বাসার ভিতর যা যা দরকার মূলত সবই আছে, থাকার ঘর, খাওয়ার ঘর থেকে শুরু করে মোটামুটি সবই । এবং এই নৌকা দিয়ে ২-১ দিন হাওড়েই ঘুরতে পারবেন।

দিনের বেলা গোধুলীর সৌন্দর্য থেকে শুরু করে, রাতের বেলা চাঁদের আলোয় হাওড়ের এক অতিপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব দেখার সুযোগ আছে এটায়।  এ যেন পানির উপর ভাসমান চলন্ত এক বাড়ি। এর কারণেই পর্যটকদের আনাগোনা আগের তুলনায় আরও বেড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা যাতায়াত কম আছে মানুষের, তবে তা দ্রুত কেটে যাবে এই আশা করা যায়। কেননা সুনামগঞ্জ অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান একটি উৎসও এই টাঙ্গুয়ার হাওড়। ৮৮ টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এর জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নির্ভর করে এই হাওড়ের উপর। যুগ যুগ ধরেই ভ্রমণপিপাসু দের কাছে টাঙ্গুয়ার হাওড় অন্যতম একটা আকর্ষণের জায়গা। সুনামগঞ্জ ঘুরতে এসে যদি টাঙ্গুয়ার হাওড়ে না আসেন, তাহলে আপনার ভ্রমণ একদমই অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।  

সর্বাধিক পঠিত