– এই আমটা এদিক দিবি কইলাম। নইলে কিন্তু খবর আছে।
– আরে আপা, আমি তো দিতাসিই। এহন তুমি না নিতারলে আমি কি করমু।
গাছের উপর থেকে ঠিক এভাবেই বড়বোন শাহানার কথাটার জবাব দিলো বাবুল। তারা ৫-৬জন মিলে স্কুল থেকে একসাথে বাড়ির দিকে ফিরছিলো। সে পাশের গ্রাম হাইস্কুলটায় এবার ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়েছে। বাবুলের বড় বোন শাহানা ওই স্কুলেই ক্লাস এইটে পড়ে। বাবুলদের বাড়ির মিঠু, টুম্পা, শম্পা, সুজনও ওই স্কুলে পড়ে। এদের মধ্যে টুম্পা-শম্পা যমজ বোন। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মিঠুর নজর যায় মীর বাড়ির গেটের পাশের আম গাছটার উপর। গাছে ঝুলে থাকা পাকা আমগুলো দেখে সে বাবুলকে ডাক দিলো।
বাবুল খুবই দুরন্ত প্রকৃতির ছেলে। বড়বোন শাহানার বারণ অগ্রাহ্য করে সে মিঠুর দেখানো আমগুলো পারার জন্যে সে হুরমুর করে গাছে উঠে গেলো। এরপর একে একে আমগুলো পেরে নিচে ফেলছিলো কিন্তু মিঠু আর সুজনের কারণে বাকি ৩জন আম নিতেই পারছিলো না। তাই শাহানা বাবুলকে ধমক দিয়ে তার দিকে একটা আম দিতে বলে। বাবুল শাহানার কথার জবাব দিয়ে ডান কোণে ঝুলে থাকা আমটা ডাল থেকে ছিঁড়ে নিয়ে শাহানার দিকে ফেললো। কিন্তু শাহানা এবারও আমটা ধরতে পারলো না। বেশি পাকা হওয়ার কারণে আমটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে ফেটে নষ্ট হয়ে গেলো।
-এই আফা, এইডা কি করলিরে তুই। এতো সুন্দর আমডারে এমনে নষ্ট করলি?
-তোরে না কইলাম ভালোমতো ফালাইতে। এহন আরেকটা দে।
-পারতাম না। আগে নিজে খাইয়া লই।
এই বলে বাবুল এক ডালে উপরে পিঠ ঠেকিয়ে নামমাত্র বসে একটা আম খাওয়া শুরু করলো। শাহানা রাগে আবার বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলো। তার পিছে পিছে হাঁটা হাটা শুরু করলো। শাহানাকে বাড়ি ঢুকতে দেখে তার মা রোজিনা বাবুলের কথা জিজ্ঞেস করলো।
-তোমার পোলায় মীরসাবের আমগাছে উইঠা বইসা বইসা আম খাইতাসে।
-এই পোলাডারে যে আমি কি করি। সারাটাদিন গাছে গাছে থাকে। যেদিন বাপটার মতো হাতপা ভাইঙ্গা ঘরে পরবো ওইদিন বুঝবো।
বাবুল-শাহানার বাবা স্বপন মিয়া গত দুই বছর ধরে বিছানায় পড়া। আগে সে একটা ইটভাটায় মাটি টানার কাজ করতো। একদিন রাতে গ্রামের বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মধুর চাক ভাঙতে গিয়ে গাছ থেকে পরে পা ভাঙ্গে। থানার সরকারি হাসপাতালটায় নিলে সে আর কখনো হাঁটতে পারবে না বলে ডাক্তার জানায়। তখন থেকেই সে শয্যাশায়ী। জমিজমাগুলোতে লোক দিয়ে চাষ করিয়ে যা আসে তা দিয়েই কোনোরকম দিন চলে যায় তাদের। এদিকে মেয়েটার জন্যেও এখন বিভিন্ন দিক থেকে বিয়ের প্রস্তাবনা আসে। সে কীভাবে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। এখন তার মনেপ্রাণেই একটাই প্রার্থনা যে তার বাবুল তাড়াতাড়ি সংসারের হালটা ধরুক।
কিন্তু বাবুল ঠিক যেনো তার শৈশবের প্রতিচ্ছবি। সারাদিন গাছে গাছে ঘুরে বেড়াবে। সেও তো এমন করতো। তার মা তো ঠিক একইভাবে তার জন্যে গলা ফাটাতো। যেদিন স্বপনের বাবা খোকন মিয়া মারা গেলো সেদিন থেকে যেনো সবকিছু কেমন হয়ে গেলো। স্বপন মিয়ার গাছে উঠা বন্ধ হয়ে গেলো। সেই ছটফটে স্বপন হঠাৎ করে কেমন নির্বাক হয়ে গেলো। সে মাঝেমধ্যে ভাবে তার মৃত্যুই হয়তো স্বপনকে সংসারী করে তুলবে।
হঠাৎ সে রোজিনার গলার চিৎকার শুনতে পেলো। ও আমার বাজান রে…
সকল ধরনের চাকরির খবর পেতে ক্লিক কর এখানে